আমরা সকলেই মানুষ, মানুষ হিসেবে বা প্রাণীকুল হিসেবে প্রতিটি প্রাণীর ওই নির্দিষ্ট একটি সময় ঘুমানো প্রয়োজন। কিন্তু আমরা ইদানিং খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করতে পারে পারছি, যে কোন কারণবশত আমাদের রাতে বা দিনের বেলায় ভালো ঘুম হচ্ছে না।
ধরুন, আপনি সারাদিন অফিসে কাজ করেছেন কিংবা আপনি একজন স্টুডেন্ট বা আপনার শেষ বয়সে আপনি এখন অবশ্যই আছেন। আমাদের প্রায় প্রত্যেক বয়সেই এখন প্রায় সই আমরা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। রাত ১০ টা, ১১ টা বেজে গেছে, তখন হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে বা মেসেঞ্জারে কোন মেসেজ আসলো, কিংবা কোন ইন্টিষ্টিং মুভি কিংবা শর্ট ফিল্ম দেখতে খুব ভালো লাগছে। দেখতে দেখতে ২/৩ ঘন্টা কেটে গেছে আমরা বুঝতেই পারিনি। আমাদের সাথে প্রতিনিয়তই এরকম ঘটছে। এভাবেই তিন চার ঘন্টা যাওয়ার পর, রাত অনেক গভীর হয়ে গেছে কিন্তু ঘুম আর আসছে না। এই সমস্যাটা শুধু একটি নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের জন্য নয়, এটা এখন দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সাধারণভাবে জানি প্রতিটা মানুষের প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৮ ঘুমানো প্রয়োজন। কারণ আমাদের মস্তিষ্কে যে নিউরোকেমিক্যাল রয়েছে, টি আমাদের সারাদিন কথা বলতে বা অফিসের কাজ করতে করতে আমাদের নিউরোকেমিক্যাল প্রতিনিয়ত খরচ হচ্ছে। এভাবেও বলা যেতে পারে দিনে নিউরোকেমিক্যাল এর স্টোরেজ প্রতিনিয়ত খালি হচ্ছে। আর একজন মানুষ যখন তার শরীরে নিউরো কেমিক্যালস এর ঘাটতি থাকবে তখন তার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়বে। তার মাথা ব্যথা করবে, বল পাবেনা, প্রচুর পরিমাণে ঘাম হবে, ঘুম কম হওয়ার কারণে বা নিউরো কেমিক্যালস এর ঘাটতির ফলে তার শরীর পুরোপুরি দুর্বল হয়ে পড়বে।
আমাদের যদি প্রতিদিন ৮-৯ ঘণ্টা ঘুম না হয় তবে আমরা যে যে রোগে আক্রান্ত হতে পারি, যেমন- ১.ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়বে।
২. Cronic dieases এর প্রবণতা বেড়ে যাবে।
৩. হাইপার টেনশন।
৪. Diabetes ।
৫.দ্রুত বয়সের ছাপ চলে আসে।
আর এভাবে ঘুম যদি না হতে থাকে আরো নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে।
সুতরাং- আমাদের জানা উচিত কি কি করলে আমাদের ঘুম ভালো হবে আপ প্রতিদিন ৮-৯ ঘন্টা ঘুমাতে পারবো।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, একটি নবজাতক শিশু বা ছোট বাচ্চাদের কথাই ধরি, তাদের কিন্তু কোন কাজ নেই, কোন চিন্তা নেই, তারা সারাদিন ১৭-১৮ ঘন্টা প্রতিদিন ঘুমায়। ওই শিশুর মাথায় কিন্তু কোন চিন্তা বা কোন কিছু করার ইচ্ছা কোনটাই নেই। যেহেতু তার কোন চিন্তা নেই, সেহেতু তার মস্তিষ্ক অনেক শীতল। আর ওই শিশুটি যখন বড় হতে থাকে, তার মাথায় নানা রকমে চিন্তা ভাবনা চলে আসে। আর সে প্রতিনিয়ত তার মাথার সারাদিনের কাজকর্মের চলা ফেরার বিষয়গুলো মাথায় ঘুরতে থাকে। এ কারণেই ঘুমের সমস্যা হয়।
ঘুম ভালো হওয়ার কিছু কিছু কারণ উল্লেখযোগ্য করা হলো।
১. আমরা যেখানে ঘুমাই, সেখানে অবাঞ্ছিত কোন আলো যেন প্রবেশ না করতে পারে। মানে কোন উচ্চ আলোর লাইট যেন না জ্বলে। এতে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে।
২. আমরা যেন প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যাই। এর কারণ আপনার মস্তিষ্ক ঠিক ওই সময় বুঝতে পারবে যে আপনার কখন ঘুমানো উচিত। এমনকি প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
৩. প্রতিদিন ৯ টা থেকে ১২ টা এই সময় এর ভিতরে ঘুমানো সবথেকে ভালো। আরো বেশি ভালো হয় ৮টা ৯টা দিকে ঘুমাতে পারলে।
৪. প্রতিদিন অফিস থেকে আসার পর, মোবাইল, কম্পিউটার, যেকোনো ইলেকট্রিক ডিভাইস থেকে যথাসম্ভব রাতে এগুলোর কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা।
৫. প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ভালোভাবে বিছানা প্রস্তুত করা বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিছানায় ঘুমাবেন।
৬. ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত, মুখ, পরিষ্কার করা।
৭. যথাসম্ভব চিন্তা মুক্ত হয়ে ঘুমাতে যাওয়া।
আরো অনেকগুলো কারণ আছে। যার কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত ঘুমানোর সমস্যা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ভালো ঘুমের জন্য উত্তম হবে রাত ৮ টা ৯ টার পর আপনার মোবাইল ফোনে ডেটা কানেকশন বন্ধ করা। তাহলে কোন অবাঞ্ছিত MESSAGE যা
আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না। কারণ, আমাদের মস্তিষ্ক এমন ভাবে তৈরি কেউ কোন প্রশ্ন করবে বা আপনি কারো কাছে কোন কিছু জানতে চাইলে তার উত্তরের অপেক্ষায় বসে থাকবেন বা সে বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তা করবেন। এইজন্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে রাতে যতটা সম্ভব দূরে থাকা।
এই ধরনের বিষয়গুলো আমরা যদি প্রতিনিয়ত মেনে চলতে পারি। তাহলে অবশ্যই আমাদের যে দৈনিক ঘুমের চাহিদা রয়েছে টা পুরোপুরি ভাবে মেটানো সম্ভব।
লেখক :- মোঃ আশিকুর রহমান (হেলথ এন্ড ফাস্ট এইড ট্রেইনার)
ছবি:-পিক্সাবে.কম