রাসেল ভাইপার
15 0
Read Time:9 Minute, 22 Second

সাম্প্রতিক,বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং আরো কিছু দেশের মানুষের জন্য রাসেল ভাইপার নাম টা ভয়ানক হতে শুরু করেছে।Russell’s Viper, বাংলায় যাকে আমরা বলি চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া। বৈজ্ঞানিক নাম Davoia resselli।

এই চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া কে নিয়েই কিছু প্রশ্ন রয়েছে । যেমন:

Davoia resselli কে Ressell’s Viper বলা হয় কেন? হঠাৎ বাংলাদেশ এবং আশেপাশের দেশগুলোতে এই সাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পেল কেন?চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া কিভাবে একটা আতঙ্কের নাম?এই সাপের স্বভাব কেমন? এটা একটা আগ্রহের বিষয় কেননা প্রত্যেক সাপের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য থাকে, যা তাকে অন্যান্য সাপ থেকে আলাদা করে, যেমন, Hognose প্রজাতির সাপেরা বিপদ বুঝতে পেরে মৃতের ভান করে, মানুষ যেভাবে মুখ থেকে থুতু নিক্ষেপ করতে পারে ঠিক সেভাবেই Spitting Cobra মুখ থেকে টার্গেট বরাবর বিষ নিক্ষেপ করতে পারে এবং এ বিষয় এতোটাই মারাত্মক যে চোখে লাগার সাথে সাথে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে । কিছু সাপ শিকারীর হাত থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের শরীরের রং পরিবর্তন করতে পারে। এরকমই শিকার করা এবং শিকারীর থেকে বাঁচার জন্য কিছু কৌশল চন্দ্রবোড়ার রয়েছে ।
আমরা আজকে এই রাসেল  ভাইপার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

Russell’s Viper অনেক বিষধর একটি স্থলজ সাপ। এরা জলেও বাস করতে পারে। এটি সাধারণত ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান মায়ানমার এবং আশেপাশের অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
ভারতীয় অঞ্চলের সাপ নিয়ে লেখা Patrick Russell এর বই “An account of Indian Serpents ” এ Russell’s Viper সাপের বর্ণনা পাওয়া যায়।তাই Patrick Russell এর নাম অনুসারে এই সাপের নাম হয় Russell’s Viper.
Russell’s Viper একটি নিশাচর মাংসাশী প্রাণী।তারা সাধারণ ইদুর শিকার করে এবং খড়খুটোর মধ্যে বাস করে। সারাবছর রাতে শিকার করলেও, শীতকালে এর আচরণ পরিবর্তন হয় এবং দিনের বেলাতেও শিকার করে থাকে।বয়স্ক রাসেল ভাইপার সাধারণত অলস এবং ধীর প্রকৃতির হয়,যতক্ষণ না তাকে আক্রমণ করা হয়।যদি তারা বিপদ বুঝতে পারে তখন অনেক ভয়ানক এবং আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। কমবয়সী রাসেল ভাইপার কিছু টা ভীতু প্রকৃতির হয়।
ভয় পেলে রাসেল ভাইপার শরীর বাঁকা করে এবং কয়েকটি S আকৃতির লুপ তৈরি করে,শরীরের সামনের অংশ মাটি থেকে উপরে তোলে এবং “হিস” শব্দ তৈরি করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। রাসেল ভাইপারের তৈরি করা “হিস” শব্দ অন্যান্য সাপের তুলানায় অনেক বেশি জোড়ে শোনা যায়। রাসেল ভাইপার কখনো কখনো পুরো শরীর মাটি থেকে উপরে তুলে লাফ দিতে পারে। এ সাপগুলো অনেক শক্তিশালি হয় এবং ধরতে গেলে হিংস্র হয়ে ওঠে। যেকোন সময় দংশন(bite) করতে পারে।

বাংলাদেশে রাসেল ভাইপার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ:

সাম্প্রতিক, বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের কাছে খবর আসছে যে প্রায়শই মানুষ রাসেল ভাইপার কর্তৃক আক্রমনের শিকার হয়েছে।বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে যেমন,রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁ,পটুয়াখালী এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা গেছে। এর কারণ হলো আমাদের দেশে রাসেল ভাইপারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ রাসেল ভাইপার কেন বৃদ্ধি পেল? এক্সাক্ট কারণ অজানা হলেও নিম্নে উল্লেখীত কারণে রাসেল ভাইপারের পপুলেশন বৃদ্ধি পেতে পারে।

আগে চাষাবাদের জন্য আমাদের বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হতো তাই সারাবছর খুব বেশি হলে দুটি ফসল চাষ করা যেত। বছরের বাকী সময় জমি ফাঁকা থাকতো। ১৯৯০ সালের পর সেচ পদ্ধতির উন্নয়ন সাধিত হওয়ায় কমবেশি সারাবছর জমিতে ফসল থাকে তাই বাসস্থান এবং খাবার কোনটারই অভাব হয় না। ফসলের ক্ষেতে খাবারের জন্য পর্যাপ্ত ইঁদুর তারা পায় এবং ফসলের ক্ষেত তাদের বাসস্থান হয়। পশ্চিম বাংলার মালদহ জেলার সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরাসরি সংযোগ থাকায় ভারত হতে বাংলাদেশে রাসেল ভাইপার আগমন ঘটতেও পারে। এছাড়াও  ২০১৪-১৫ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫ টি রাসেল ভাইপার অবমুক্ত করা হয়। এছাড়াও এখন পর্যন্ত পদ্মা অববাহিকায় এই সাপ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। আমরা দেখেছি যেসব জায়গায় এই সাপ পাওয়া গেছে তার অধিকাংশ জায়গাতেই কচুরিপানা রয়েছে, কেননা কচুরিপানার মধ্যেও এই সাপ পাওয়া গেছে। কাজেই আমরা ধরে নিতে পারি কচুরিপানার ওপরে ভেসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এই সাপ বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছেছে।

সাধারণত কৃষি জমিতে থাকে বলে মানুষ অনেক সময়ই সাপের গায়ে পা দেয় বা না জেনে একে বিরক্ত করে থাকে। আর রাসেল ভাইপার বিপন্ন বোধ করলে আচমকা আক্রমণ করে থাকে।
এই প্রজাতির সাপের কামড়ের কিছুক্ষণ পরই দংশিত স্থানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ব্যাথার পাশাপাশি দংশিত স্থান দ্রুত ফুলে যায় এবং ঘণ্টা খানেকের মধ্যে দংশিত স্থানের কাছে শরীরের আরো কয়েকটি অংশ ফুল যায়।
দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে নিম্ন রক্তচাপ, কিডনি অকার্যকর,প্যারালাইসিস হওয়া সহ বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৫৪ লাখ মানুষ সাপের দংশনে দংশিত হয়, যার মধ্যে প্রতি বছর অন্তত এক লাখ মানুষ মারা যায়।
আর সাপের দংশনে আহত হয়ে বছরে প্রায় ৪ লাখ মানুষের অঙ্গক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
সংস্থাটির ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত ৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন এবং বছরে অন্তত ছয় হাজার মানুষ মারা যান।

কেউ যদি রাসেল ভাইপার কর্তৃক দংশিত হোন তাহলে নিম্ন লিখিত পদক্ষেপ গুলো নিতে হবে:

১/ ভয় পেয়ে দৌড়াদৌড়ি, চিল্লাচিল্লি করবেন না। নিজেও শান্ত থাকুন এবং ভিকটিম কেউ শান্ত থাকতে বলুন।

২/ সাপে কাটা স্থানে ব্যান্ডেজ করুন। ব্যান্ডেজ বেশি টাইট করবেন না। কাটা স্থানে বা আশেপাশে কাটাছেঁড়া করবেন
না।
৩/ কাটা স্থানে মুখ লাগিয়ে চুষবেন না। এতে কোন লাভ হয় না বরং ইনফেকশন হতে পারে।কাটা স্থানে মুখ লাগিয়ে চোষা সম্পূর্ণ কুসংস্কার।

৪/ভিকটিম কে শুইয়ে রুখুন। ভিকটিম কে হাঁটাচলা বা দৌড়াদৌড়ি করতে দিবেন না। হাত বা পায়ে কামড়ে দিলে হাত বা পা কোন কাঠামোর উপর রাখুন যাতে পেশার না পড়তে পারে।

৫/ কাটা স্থানে বরফ দিবেন না।

৬/ ভিকটিমকে অ্যালকোহল, হার্বাল অথবা এসপিরিন খাওয়াবেন না ।

৭/ যতদ্রুত সম্ভব আশেপাশের কোন হাসপাতালে নিয়ে যান।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
100 %