3 0
Read Time:5 Minute, 10 Second

অনেক সময় আঘাত বা বিভিন্নভাবে কাটা ছেঁড়ার ও পোড়ার ক্ষত দ্রুত শুকায় না, প্রায় কয়েক সপ্তাহ লেগে যায় ক্ষত শুকাতে। এমনকি কয়েক মাসও ক্ষত কাঁচা থেকে যেতে পারে। সাধারণত এসব ক্ষতকে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত বলে। এটি দুশ্চিন্তার কারণ বৈকি।

নানা কারণে ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এসব ক্ষত সারাতে বিশেষ যত্ন ও চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। অবহেলা করলে ক্ষত আরোও গভীরে ছড়িয়ে হাড়ে সংক্রমণ, এমনকি চর্মজনিত ক্যান্সারও হতে পারে। ক্ষত নিরাময় মানব দেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা ৪ টি সুনির্দিষ্ট পর্যায়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়। এর মধ্যে আছে – হেমোষ্ট্যাসিসি, প্রবাহ, প্রসারণ ও পুননির্মাণ।

ক্ষত সফলভাবে নিরাময়ের ৪ টি পর্যায়ই যথাযথ ক্রোম ও সময় মেনে ঘটতে হবে। অনেক গুলো বিষয় আছে, যেগুলো ক্ষতস্থান পূরণের পর্যায় গুলোকে বাধা দেয়। ফলে ক্ষত শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগে।
যেমন
১. সংক্রমণ :
ক্ষতস্থানে জীবাণু বারবার আক্রমণ করলে।
২. রক্তক্ষরণ :
ক্ষতস্থানে রক্তপাত হতে থাকলে নতুন কোষ তৈরি, জোড়া লাগা, মজবুত হওয়া বন্ধ থাকে।
৩. মরা চামড়া বা কোষ :
ক্ষতস্থানে মরা চামড়া বা কোষ থেকে গেলে বা শরীরের অংশ নয়, এমন কিছু রয়ে গেলে ক্ষত শুকাতে বেশি সময় লাগে।
৪. রক্ত চলাচলে বাধা :
ক্ষতস্থানে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
৫. খাদ্য ও পুষ্টির ঘাটতি :
ক্ষত পূরণের জন্য শরীরের বেশি পরিমাণে প্রোটিন, জিংক, আয়রন ও ভিটামিন সি এর প্রয়োজন। এসবের পরিমাণ কোম থাকলে ক্ষত শুকাতে অনেক সময় নেয়। অন্যদিকে শরীরে বাড়তি ওজনের কারণেও ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।
৬. ধূমপান:
ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ক্ষতস্থান পূরণ হতে ধীরগতি দেখা দেয়। সেই সাথে আরো জটিলতর সমস্যা হতে পারে।

ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব, ক্যান্সার, রক্তনালীর সমস্যা বা রক্ত চলাচলে সমস্যা জনিত রোগ থাকলে ক্ষতপূরণ হতে অধিক সময় নেয়।
এছাড়া ডায়াবেটিস, নিউরোপ্যাথি, ও কুষ্ঠ থাকলে অনুভূতি কমে যায় বারবার ক্ষত বা আঘাত লাগলেও রোগী বুঝতে পারে না। ফলে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতস্থানের সৃষ্টি হয়। বিশেষ ধরনের জীবাণু দিয়ে সংক্রমণ হলেও ক্ষত দীর্ঘ মেয়াদী হয়।

করণীয়:
১. কোন ক্ষত স্বাভাবিকের (৩/৪ সপ্তাহ) তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
২. চিকিৎসক রোগীর সম্পূর্ণ পূর্বের ইতিহাস ও ঔষধ অভ্যাস ও অন্যান্য রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা, রক্ত চলাচল ও স্নায়ু পরীক্ষা, ক্ষতস্থানের পুঁজ এমনকি সামান্য মাংস কেটে পরীক্ষা করে ক্ষত না শুকানোর কারণ বের করে চিকিৎসা দেবে।
৩.এভাবেই একজন মানুষ তার এই সংক্রমণ ব্যাধি থেকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থতা লাভ করবে।

গ্রাম এলাকায় ভুল ধারনা আছে এমন কেটে গেলে বা ক্ষত হলে টক খাওয়া যাবে না।
মেডিকেল সায়েন্স বলে পরিমিত টক খাওয়া ক্ষতের জন্য উপকারীই বটে কেননা এতে ভিটামিন সি সংযোজক কলার কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন কোলাজেনে অবস্থিত প্রোলিনের সঙ্গে পানির সংযোজন ঘটিয়ে হাইড্রোক্সিপ্রোলিন তৈরি করে। এভাবেই কোলাজেনের উৎপাদন সহজ করে কাটা বা ক্ষতস্থানকে মাংসপেশির তন্তুতে ভরাট করে ফেলে এবং ঘা শুকিয়ে যায়। কাজেই দেখা যায়, টক জাতীয় ফল খেলে ঘা পাকে না। বরং এটি ঘা শুকাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

মোঃ ইব্রাহিম হোসেন ইমন
(হেলথ এন্ড ফার্স্ট এইড ট্রেইনার)

Happy
Happy
100 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
100%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

4 thoughts on “দ্রুত ঘা শুকানোর উপায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *